কাজের গতি বাড়াতে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন: ওবায়দুল কাদের
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
সময়ের প্রয়োজনে কাজের গতি বাড়াতে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দু’টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে গতকাল সোমবার সেতু ভবনে এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা কাজের সুবিধার জন্য। কাজের সুবিধার জন্য পুনর্বিন্যাস, পূণর্গঠন অনেক সময় প্রয়োজন হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু টিম লিডার। এই জাহাজের ক্যাপ্টেন, কাজেই রাষ্ট্রীয় জাহাজটি যাতে ভালোভাবে চলে, গতি সম্পন্ন হয়, সমন্বয় নিয়ে যেন চলতে পারে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী সময়ের চাহিদা মেটানো, বাস্তবতাকে আলিঙ্গণ করবেন এবং সেজন্য এই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাজের ক্যাপ্টেন, নৌকার মাঝি। তিনি জাহাজরূপী দেশটা চালানোর সুবিধার্থে কিছু পরিবর্তন এসেছে। সরকার গঠনের পাঁচ মাস পর গত রোববার মন্ত্রিসভায় প্রথম পরিবর্তন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বরত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়। দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার পর এখন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার শুধু ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দেখভালে থাকবেন। আর প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সামলাবেন মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ইসলামকে স্থানীয় সরকার বিভাগে রেখে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টচার্য্যকে শুধু পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভায় এই পুনর্বিন্যাসের কারণ জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, মন্ত্রী পরিষদ গঠন, পুনর্বিন্যাস- পরিমার্জন-পরিবর্ধনের এখতিয়ারটি সম্পূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রীর। এ ধরনের পদক্ষেপ সব দেশেই নেওয়া হয়। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া মন্ত্রনালয় ভাগ করে দেওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে জানালে জবাবে কাদের বলেন, সে ধরনের কোনো বিষয় নয়, এটা হচ্ছে কাজের সুসমন্বয়, কাজের গতি, কাজের মান। এই বিষয়টিকে নিশ্চিত করার জন্য কাজটা ভাগ করে দিলে গতিটা বাড়ে, সমন্বয় বাড়ে এবং কাজের কোয়ালিটি বাড়ে, কাজ আরও বেশি করে করা যায়। সে দিকটাকে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী দেখেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদে শপথ নেন শেখ হাসিনা। ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রীকে নিয়ে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা সাজান তিনি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেওয়ায় শূন্য হওয়া বগুড়া-৬ আসনে তার যথাযথ বিকল্প কোনো প্রার্থী দলটি খুঁজে পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপি মহাসচিবের জায়গায় অন্য প্রার্থী যোগ্য হবে কিনা জানতে চেয়ে কাদের বলেন, সেখানে তার চেয়েও যোগ্য ব্যাক্তি কি আসবেন? ফখরুল ইসলামের চেয়েও কি শক্তিশালী কোনো বার্তা নতুন ব্যক্তিটি সংসদে দিতে পারবেন – এমন কেউ আসছেন? সেটাতো আমার মনে হয় না। ভার-ভারত্বের দিক থেকে আমার মনে হয় মির্জা ফখরুল পারপাসটা ভালোভাবে সার্ভ করতে পারতেন। শক্তিশালী বিরোধী দলের শক্তিশালী বার্তা তিনি দিতে পারতেন। তিনি বলেন, (এমপি) সংখ্যার দিক থেকে নয়, (একটি দল) সংসদে অংশগ্রহণ করে শক্তিশালী ভয়েস রেইজ (জোরালো উচ্চারণ) করবে এটাই বড় কথা। এদিক বিবেচনায় আমার মনে হয় মির্জা ফখরুল পারপাসটা ভালোভাবে সার্ভ করতে পারতেন। শক্তিশালী বিরোধী দলের দৃঢ়বার্তা তিনি দিতে পারতেন। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন ফখরুল। কিন্তু তিনি শপথ না নেওয়ায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ২৪ জুন ফের ভোট করবে নির্বাচন কমিশন। মির্জা ফখরুলের সংসদে যোগদান বিএনপির জন্য আবশ্যক ছিল মন্তব্য করেন কাদের বলেন, এখানে আমার মনে হয় এটা শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে যে, তারা সংসদে যোগ দিয়েছেন। গণফোরামের দু-জনও সংসদে এসেছেন। এই অংশগ্রহণ সংখ্যার দিক থেকে নয়, সংসদে যোগদান তাদের বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির পারপাস সার্ভ করার জন্য। যোগদানই যেহেতু করেছেন, সেহেতু ইফেক্টিভ, সবচেয়ে মিনিংফুল বক্তব্য রেখে তাদের বার্তাটা দেশ-বিদেশে সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মির্জা ফখরুলের যোগদানটা একেবারেই আবশ্যক ছিল। অন্যরা হয়তো তাদের ভয়েস সংসদে উত্থাপন করবেন, সোচ্চার হতে চেষ্টা করবেন। কিন্তু ভার-ভারত্বের দিক থেকে আমার মনে হয় মির্জা ফখরুল পারপাসটা ভালোভাবে সার্ভ করতে পারতেন। শক্তিশালী বিরোধী দলের দৃঢ়বার্তা তিনি দিতে পারতেন। সংসদে বিরোধী দলের ভ‚মিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা শক্তিশালী অপোজিশনের (বিরোধী) আরও স্ট্রংগার ভয়েসই (দৃপ্ত উচ্চারণ) আশা করি। সরকার কোনো ভুল করলে তারা তা ধরিয়ে দেবে। আমরা সেখান থেকে শিক্ষা নেবো। তারা যদি রাজপথে আন্দোলন করে, আমরা তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবো। জনগণের জানমাল ধ্বংসের কোনো শঙ্কা থাকলে প্রশাসন প্রশাসনিকভাবে দেখবে। কাদের অসুস্থ থাকাবস্থায়ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও মনিটরিংয়ে মন্ত্রণালয়ে কাজ অব্যাহত থেকেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে কোনো কাজ থেমে নেই। পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল প্রকল্প, ডিটিসিবি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ১ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রথম আমার টেলিফোনে কথা হয়। তিনি আমার মন্ত্রণালয়, প্রকৌশলীদের ভ‚য়সী প্রশংসা করেছেন। আমি আমার সহকর্মীদের প্রশংসায় দারুণ উচ্ছ¡সিত হয়েছি। ভালোভাবে চললে, সৎভাবে চললে, মানুষের পাশে থাকলে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়। আমি মরে গেলে এটা বুঝতে পারতাম না। নিজের কর্মতৎপরতার ব্যাপারে কাদের বলেন, আশা করছি দ্রæত কাজের গতি পাবো। আমার কাজের প্রতি উৎসাহ আরও বেড়ে গেছে। কমিটমেন্ট আরও জোরদার হয়েছে। দায়িত্ব পালনের তাগিদ আমি নতুনভাবে পেলাম। মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় কোনো কিছু নেই, আমি তা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে শিখেছি। যেহেতু নিজের জীবন থেকে আমি এ শিক্ষা পেয়েছি, তাই সবাইকে বলবো মানুষের পাশে থেকে ভালোবাসা অর্জন করতে। মানুষের কাছে ক্ষমতা থাকলে তা অহংবোধ জাগিয়ে তোলে, কমিটমেন্ট থেকে দূরে রাখে। সাংবাদিকরা সমালোচনার মাধ্যমে কাজে সহযোগিতা করেছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, একটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, কর্মকর্তারা যদি সৎ থাকেন তবে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে যায়। আমার মন্ত্রণালয়ের দু’জন সচিব সততার সঙ্গে কাজ করছেন। কারও বিরুদ্ধে তেমন কোনো বড় অভিযোগ আসেনি। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেন, গাইবান্ধা এবং জামালপুর জেলার সংযোগকারী যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সমীক্ষার জন্য বৈদেশিক অর্থ সংস্থানের লক্ষ্যে পিডিপিপি পরিকল্পনা নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। তিনি জানান, পদ্মার মূল সেতুতে ৭৬ শতাংশ, নদীশাসনে ৫৫ শতাংশ এবং সংযোগ সড়ক ১০০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। গড়ে পদ্মাসেতুর কাজের মোট অগ্রগতি ৬৭ শতাংশ। নিজের বিষয়ে কাদের বলেন, আশা করছি, দ্রæত কাজের গতি পাব। আমার কাজের প্রতি উৎসাহ আরও বেড়ে গেছে। কমিটমেন্ট আরও জোরদার হয়েছে। দায়িত্ব পালনের তাগিদ আমি নতুনভাবে পেলাম। মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় কোনো কিছু নেই, আমি তা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে শিখেছি। যেহেতু নিজের জীবন থেকে আমি এ শিক্ষা পেয়েছি, তাই সবাইকে বলব, মানুষের পাশে থেকে ভালোবাসা অর্জন করতে। মানুষের কাছে ক্ষমতা থাকলে তা অহংবোধ জাগিয়ে তোলে, কমিটমেন্ট থেকে দূরে রাখে।